নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কৃতিম সংকট সৃস্টি করে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে কয়েকটি সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ১৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কয়েক ডজন ব্যবসায়ীর নাম প্রশাসন পেয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে রোববার ব্যবসায়ীদের আড়ত বা গুদামের ঠিকানা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে দেশে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকায় উঠবে-এমন গুজব চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের একাধিক সিন্ডিকেট ছড়িয়ে দেয়। এরপর পেঁয়াজ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-আমদানিকারক ও আড়তদারদের কারসাজিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক রাতের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।
চট্রগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভারত মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না-এমন সংবাদের ভিত্তিতে যারা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভারত থেকে কত টাকা দরে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল সে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আবার খুচরা বাজারে কোন কোন ব্যবসায়ী অতিমুনাফা করে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে ভালোমানের ভারত থেকে আমদানি করা প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। একটু নিুমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ২৫০ টাকারও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় পেঁয়াজের দাম কয়েকগুণ বাড়লেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও আড়তদারদের যৌথ কারসাজিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। শুক্রবার দুপুরে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু আগের এলসি করা পেঁয়াজ দেশে আসছে। রপ্তানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়। অথচ পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। দাম বাড়ার খবরের ভিত্তিতে আমদানির আগে চট্টগ্রামে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা। দামে কারসাজি করে দুদিনে কোটি কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে আমদানিকারক ও আড়তদাররা। কেজিতে ১২০ টাকার বেশি মুনাফা করেছে। দুই দিন আগে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। রোববার সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে এখনো পেঁয়াজের সংকট হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। আমদানি এবং দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের বিশাল মজুত রয়েছে বিভিন্ন গুদামে। এভাবে দাম বাড়ানো এবং বাজার থেকে পেঁয়াজ উধাও হওয়ার ব্যাপারটি অস্বাভাবিক ও কারসাজির মাধ্যমে হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কারসাজির পেছনে চট্টগ্রামে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যবসায়ী জড়িত। ব্যবসায়ীদের হিসাবে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। তবে সরকারি হিসাবে ২৫ লাখ টনের কিছু বেশি। সে হিসাবে একদিনে দেশের বাজারে গড়ে প্রায় ৯০ থেকে ৯৮ লাখ কেজি পেঁয়াজের লেনদেন হয়। দেখা গেছে, গত দুই রাতে বিভিন্ন ধাপে সিন্ডিকেট চক্র প্রতিকেজি পেঁয়াজে গড়ে ৮০ কোটি টাকা করে দুই দিনে মোট ১৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
খাতুনগঞ্জের একাধিক আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেককে জানান, ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় বাজারে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বিকাল ৪টা নাগাদ খবর ছড়িয়ে পড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে খুচরা ও পাইকারি সব জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলে। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে দাম বৃদ্ধির খবর আসতে থাকে। তখন অনেকে বেশি দামে বিক্রি শুরু করে। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর সাধারণ ক্রেতারাও পেঁয়াজ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ফলে রাত ৯টার মধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। শনিবার আরেক দফা বাড়ে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ জানান, ব্যবসায়ীদের আড়ত বা গুদামের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা দিতে হবে। কী পরিমাণ মালামাল মজুত রয়েছে তাও জানাতে হবে। এসব কাগজপত্র আমাদের কাছে জমা দিতে হবে। এর বাইরে কোনো গুদামে বা আড়তে মালামাল পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা করা হবে।