ক্রীড়া প্রতিবেদক।।
সিলেটে জয়ের মঞ্চ আগের দিনই প্রস্তুত করে রেখেছিল বাংলাদেশ। পঞ্চম ও শেষ দিনে বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। তবে এই আনুষ্ঠানিকতা সারতে খুব বেশিক্ষণ সময়ও নেয়নি শান্ত বাহিনী। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার বেশ আগেই নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রটি জয়ে শুরু করলো বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই বাজিমাত করলেন শান্ত।
কিউইদের সঙ্গে ঘরের মাঠে সাদা বলের ক্রিকেটে অনেক সাফল্য থাকলেও এই প্রথম টেস্ট জিতলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের জয় তুলে নিয়েছে তারা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ টেস্টে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়, দেশের মাটিতে প্রথম। এর আগে এখানে দুই দলের ছয় টেস্টের তিনটি জিতেছিল নিউজিল্যান্ড, বাকি তিনটি ড্র হয়েছিল।
শক্তিশালী দল নিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে এসেছে নিউজিল্যান্ড। সেখানে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল বেশ খর্বাশক্তির দলে। ইনজুরির কারণে দলে ছিলেন না সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ক্রিকেটাররা। ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নেওয়ায় ছিলেন না লিটন দাসও। গুরুত্বপূর্ণ এই ক্রিকেটারদের ছাড়াই নতুন অধিনায়ক শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল। এমন দল নিয়ে দারুণ লড়াই করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ছিলেন অনবদ্য। তার ঘূর্ণি জাদুতে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা প্রতিরোধের কোনও সুযোগই পাননি। দুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে একাই কিউইদের ব্যাটিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।
১১৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আগের দিনই হারের মুখে ছিল নিউজিল্যান্ড। শনিবার দেখার ছিল বাকি ৩ উইকেট নিয়ে তারা কতক্ষণ লড়তে পারে। অপরদিকে বাংলাদেশও সিলেট টেস্টের শেষ দিন মাঠে নেমেছিল যত দ্রুত সম্ভব তাদের অলআউট করে জয়ের উদযাপনে মেতে উঠতে। তাই প্রথম ওভার থেকে কিউইদের কঠিন চাপে রাখার সব আয়োজন প্রস্তুত করেছিলেন তাইজুল-নাঈমরা। উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে। তাইজুল ইসলাম-নাঈম হাসানদের ঘূর্ণি জাদুতে দিনের শুরু থেকেই দিশেহারা হয়ে ওঠে নিউজিল্যান্ড। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই নিউজিল্যান্ড হারিয়েছে বাকি ৩ উইকেট।
শনিবার দিনের প্রথম ওভারেই একটি চার মারেন মিচেল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মিড-অফ দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠান তিনি। তবে এই ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ জারি রাখতে পারেননি বেশিক্ষণ। বাংলাদেশের স্পিনাররা তাকে রক্ষণে মনোযোগী হতে বাধ্য করেন।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন মিচেল। তিনি হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৯৯ বলে। এরপর অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। মিচেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধাটিকে সরিয়ে দেন নাঈম। ১২০ বলে ৭ চারে ৫৮ রানে থামেন কিউই ব্যাটার। এই উইকেটের পেছনে কৃতিত্ব দিতে হয় শান্তকে। সাধারণত ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ফিল্ডার যে অবস্থানে থাকেন, সেটার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে তাইজুলকে রেখেছিলেন তিনি। শুধু এটিই নয়, পুরো ম্যাচেই শান্তর দারুণ নেতৃত্ব ছিল উপভোগ করার মতো। মিচেল বিদায় নিলে নিউজিল্যান্ডকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ অব্দি ১৮১ রানে থামে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংস।
ম্যাচসেরা ছিলেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন ৪টি। তাতে বামহাতি স্পিনার এক টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন দ্বিতীয়বার।