নিজস্ব প্রতিবেদক।।
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের আয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দেশে রাজস্ব আয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিপুল এই রাজস্ব আয়ের উপর ভর করে বড় অংকের বাজেট পেশ ও দেশব্যাপী উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। এমনকি পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে এনবিআর’র রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৬২হাজার ৪২কোটি টাকা, যা বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩লাখ ২৫হাজার ২৭৫কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ গত ১৪ বছরে এনবিআরের আদায়কৃত রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪২৫শতাংশ।
কোভিড অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীল বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের সাফল্য সবার নজর কেড়েছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় কমেনি বরং বেড়েছে।
ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করনীতি এবং অনলাইনভিত্তিক করসেবা ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করেছে এবং একইসাথে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব আয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে রাজস্ব প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা।
এনবিআর’র সদস্য ড. মো. সহিদুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ‘২০০৯-১০ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ ছিল ৬২হাজার ৪২কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৩লাখ ২৫হাজার ২৭৫কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
মূলত করবান্ধব নীতি, সহজ ও নিরবিচ্ছন্ন করসেবা প্রদান এবং করদাতাদের আন্তরিক সহযোগিতায় রাজস্ব আয় ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড অতিমারি ও বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও সময়োপযোগী বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০.০৬ এবং ১২.৬৬ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এই সময়ে আমদানি-রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখার সাহসী সিদ্ধান্ত এই অর্জনে মুল ভুমিকা রেখেছে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন- গত ১৫বছরে সরকার দেশে একটা শক্তিশালী কর সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে করদাতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করনীতি অনুসরণ করে চলেছে। আধুনিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনা তৈরির লক্ষ্যে ভ্যাট আইনের সংস্কার এবং নতুন আয়কর আইন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এনবিআরের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও বলেন, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস উভয়ক্ষেত্রের অনেকাংশে অনলাইনভিত্তিক করব্যবস্থা প্রস্তুত করা হয়েছে- যার ফলে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে করদাতারা কর দিতে পারছেন এবং ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি, আধুনিক কাস্টমস ব্যবস্থাপনা, ভ্যাট আদায়ের জন্য ইএফডি বসানো, অনলাইনে মূসক নিবন্ধন, দাখিলপত্র জমা এসব অটোমেশন কার্যক্রম মানুষের কাছে করসেবা অনেক সহজ করেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩লাখ ২৫হাজার ২৭৫কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে আয় ছিল ৯১হাজার ৭২০কোটি টাকা, স্থানীয় মূসক বাবদ আয় ছিলো ১লাখ ২০হাজার ৬৩৩কোটি টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর মিলে আয় ছিলো ১লাখ ১২হাজার ৯২১কোটি টাকা।
এনবিআরের রাজস্ব আহরণের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন- ‘গত কয়েক বছরে দেশে বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব আয় সমান তালে বেড়েছে। একইসাথে ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় করদাতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, রাজস্ব আয়ও তেমন বাড়ছে।’
বিদেশী ঋণের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর প্রতি সরকারের গভীর মনোযোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিদেশী ঋণ নির্ভরতা পরিহার করে দেশের অভ্যন্তরে অর্জিত রাজস্ব আয় দিয়ে এখন অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এসব প্রকল্প মানুষের জীবনযাপন সহজ করেছে একইসাথে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ইতিবাচক ভুমিকা রাখছে।
তিনি দেশে যুগোপযোগী আধুনিক করব্যবস্থা গড়ে তুলতে আইনী সংস্কার ও অনলাইন ভিত্তিক করব্যবস্থা প্রস্তুতির যে প্রচেষ্টা, তাঁর প্রশংসা করেন।
তিনি মনে করেন রাজস্ব ব্যবস্থা পুরোপুরি অটেমেশন হলে রাজস্ব আয় আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে এবং কর ফাঁকি কমে যাবে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর সংগ্রহ করবে ৪লাখ ৩০হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৭০হাজার কোটি টাকা।।